Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:44 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

পণ্ডিত, স্বনামধন্য পর্যটক ও মার্কসীয় শাস্ত্রে দীক্ষিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের ১৩০তম জন্মদিন আজ। ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ। রাহুল সাংকৃত্যায়ন ১৮৯৩ সালের ৯ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার পানহা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম কেদারনাথ পাণ্ডে। বাল্যকালে মাদ্রাসায় তার শিক্ষার হাতেখড়ি। তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের ওপর শিক্ষাগ্রহণ করেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ ভাষায় পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। সরকারি বৃত্তির অভাবে তার লেখাপড়া শেষ হয় উর্দু মিডল স্কুলে। ১৩ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছাড়েন। এরপর কলকাতা এসে জীবিকা নির্বাহের জন্য নানা কাজ করেন। ধীরে ধীরে তিনি রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন। তিব্বতে গিয়ে তিনি বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাহুল সাংকৃত্যায়ন নাম ধারণ করেন। এরপর তিনি মার্কসবাদের দর্শন অধ্যয়ন করেন এবং মার্কসবাদকেই তার জীবনদর্শন রূপে গ্রহণ করেন। রাহুল সাংকৃত্যায়নের জীবনের ৪৫ বছর কেটেছে ভ্রমণ করে। তাকে হিন্দি ভ্রমণ সাহিত্যের জনক বলা হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, জাপান, কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, তেহরান, বালুচিস্তান প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। ১৯১১ সালে জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় রাহুল সাংকৃত্যায়নের তিন বছর কারাদণ্ড হয়। এ সময় কারাগারে বসে তিনি পবিত্র কোরআন শরিফ সংস্কৃতিতে অনুবাদ করেন। তার অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য রাশিয়া থাকাকালে লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করেন। তিনি ৩৬টি ভাষা শিক্ষালাভ করেন এবং ফটোগ্রাফিও শেখেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন ভ্রমণ, সমাজ, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম নিয়ে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত তার বেশ কিছু গ্রন্থ অনুবাদও করা হয়েছে। তার মধ্যে মেরির জীবনযাত্রা, মধ্য এশিয়ার ইতিহাস, দর্শন দিকদর্শন, কিন্নর দেশে আমি, যাত্রাপথে, মানবসমাজ, ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান-পতন, তিব্বতের সওয়া বছর, ইসলাম ধর্মের রূপরেখা, মাও সে তুং, বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৩ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা