বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাসের ৭৪তম জন্মবাষিকী আজ। তিনি ১৯৪৯ সালে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনেই জগৎজ্যোতি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থানকালে অনেকগুলো অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করেন এবং ধীরে ধীরে নকশালপন্থিদের সঙ্গে জড়িত হন। সেখানে অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জগৎজ্যোতি যোগ দেন ভারতের মেঘাল রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। তিনি ভাটি বাংলার গেরিলা বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের প্রথম দিকে জগৎজ্যোতি টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অধীনে বিভিন্ন আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত ৪২ জন যোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করেন ফায়ারিং স্কোয়াড ‘দাস পার্টি’। তিনি ইংরেজি, হিন্দি, গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ও দাস পার্টির জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতেন। জগৎজ্যোতি ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনীর বার্জে আক্রমণ চালিয়ে বার্জটি নিমজ্জিত করে। তার দাস বাহিনী পাকিস্তানি শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস হয়। পাহাড়পুর অপারেশন, বানিয়াচংয়ে থানা ও কার্গো বিধ্বস্তসহ বেশ কয়েকটি অপারেশনে দাস পার্টির যোদ্ধারা সফল হয়। বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বিশাল সাফল্য। ১৬ নভেম্বর ১৯৭১। জগৎজ্যোতির দল বদলপুর অপারেশনে আজিমিরীগঞ্জ, মারকুলি, গুঙ্গিয়ারগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে পাকিস্তানিদের শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। তাদের প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে। যুদ্ধ চলাকালে পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে রাজাকার/পাকসেনাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস পার্টি। সম্মুখ যুদ্ধের একপর্যায়ে জগৎজ্যোতির চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন। পাক বাহিনীর সহযোগী রাজাকার সদস্যরা জ্যোতির মৃতদেহ আজমিরীগঞ্জে নিয়ে এসে জনসমক্ষে তিন দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে তার মৃতদেহ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রথম সরকার তাকে সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর সে প্রতিশ্রুতি থেকে অজ্ঞাত কারণে ফিরে আসে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার জগৎজ্যোতিকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করে।
কাজী সালমা সুলতানা