Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:55 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

অবিভক্ত বাংলার শীর্ষস্থানীয় জাতীয় নেতা রাজনীতিবিদ সমাজসেবক আবুল কাশেম ফজলুল হকের আজ ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আবুল কাশেম ফজলুল হক সাধারণ মানুষের কাছে শেরেবাংলা (বাংলার বাঘ) ও হক সাহেব নামে বেশি পরিচিত। তিনি কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩) এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদসহ (১৯৫৬-১৯৫৮) বহু উঁচু রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আবুল কাশেম ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বর্তমান ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায়। শেরেবাংলা ছোটবেলা থেকে প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা ছাড়াও তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। এছাড়া দাবা, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলা পছন্দ করতেন। তিনি বিভিন্ন কিশোর পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৮৯০ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৯৪ সালে বিএ পরীক্ষায় (রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ) উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিত শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯৭ সালে কলকাতার ‘ইউনিভার্সিটি ল কলেজ’ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করে ফজলুল হক আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯১১ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। পরের বছর ১৯১২ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা ও ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিতে ‘শহিদ মিনার’ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ধমান হাউসকে বাংলা ভাষা গবেষণা কেন্দ্র বা বাংলা একাডেমি ঘোষণা করা ও জমিদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলার মুসলমানদের জন্য অসংখ্য শিক্ষা ও কারগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ অসংখ্য জনকল্যাণকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা