সংগীতজ্ঞ, সুরকার, স্বরলিপিকার ও সংগীত পরিচালক ওস্তাদ আবেদ হোসেন খানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে তিনি ‘একুশে পদক’ ও ‘সংগীত সম্মেলন সম্মাননা-২০০২’ অর্জন করেন। আবেদ হোসেন খান ১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন বরেণ্য উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী এবং তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। শৈশবে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি তার পিতার কাছে সেতার শিক্ষা শুরু করেন। পরে তিনি একজন দক্ষ সেতারবাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সেতারের পাশাপাশি তিনি সরোদ ও সুরবাহার বাদনেও পারদর্শিতা অর্জন করেন। আবেদ খান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বেতারকেন্দ্রে ‘নিজস্ব শিল্পী’ হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৪৬ বছর বেতারে সংগীত বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান সংগীতের স্বরলিপি প্রণয়নেও পারদর্শী ছিলেন। তার সুরারোপিত আধুনিক ও দেশাত্মবোধক অনেক গান বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এছাড়া তিনি নিয়মিত সেতার ও সরোদ পরিবেশন করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সংগীত নিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আবেদ খান ১৯৭৪ সালে ভারতের কলকাতা, মাদ্রাজ, দিল্লি, মুম্বাই ও শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া রেডিও মিউজিক কনফারেন্সে সেতার পরিবেশন করে বিপুল পরিচিতি ও সš§াননা লাভ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান ও ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে সেতার পরিবেশন করে বিদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সেতার পরিবেশন করেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একজন আমন্ত্রিত সংগীত প্রশিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ লেকচারার ছিলেন। তিনি একজন সুদক্ষ বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারকও ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রের সংগীতও পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ বেতারে ফজল-এ-খোদা রচিত ও আবেদ হোসেন খান সুরারোপিত দেশাত্মবোধক গান ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি ঢাকা সংগীত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। সংগীত মহাবিদ্যালয়ে সংগীতের ইতিহাস, থিওরি ও ব্যবহারিক বিষয়ে তিনি শিক্ষকতা করেন। তার রচিত সুর-লহরী (৩ খণ্ড) গ্রন্থটি সংগীত বিষয়ের পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত। ওস্তাদ আবেদ হোসেন ১৯৯৬ সালের ২৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা