বরেণ্য অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষক, লেখক, গবেষক ও রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম আখলাকুর রহমানের আজ ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে। আখলাকুর রহমান ১৯২৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালাতে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। এরপর হাইস্কুলে পড়ার জন্য প্রথমে বালাগঞ্জ ও পরে হবিগঞ্জে যান। সিলেটের মদনমোহন কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৪৭ সালে আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শেষ করে সেখানেই তিনি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। দুই বছরের মাথায়ই রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চলে যান ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারে। এরপর যোগ দেন পাকিস্তানের পেশওয়ার ইউনিভার্সিটিতে। এসময় তিনি পাকিস্তান ইকোনমিক জার্নালের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে করাচিতে তিনি পাকিস্তানের ব্যাংক ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখানকার আটকে পড়া বাঙালিদের জন্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে অর্থনীতি ও উন্নয়নবিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮০ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ড. আখলাকুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য। সিলেটের মদনমোহন কলেজে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দুই পাকিস্তানের অর্থনীতি বা পূর্ব-পশ্চিম বৈষম্যের বিষয়ে ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ধনতন্ত্রের বিকাশ’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করেন। সত্তরের দশকে একচেটিয়া পুঁজিবাদ শিরোনামে সাম্রাজ্যবাদ বিষয়েও তার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। উবাবষড়ঢ়সবহঃ ধহফ ৎেড়ঃিয ঊপড়হড়সরপং ও বাংলাদেশ কীভাবে বৈদেশিক ঋণ থেকে বের হতে পারে, তা নিয়ে তিনি গবেষণা গ্রন্থ লেখেন। ১৯৭৫ সালে কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি বিপ্লবের সময় তিনি রাজনৈতিক দল জাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এজন্য তিনি কারাভোগও করেন। ১৯৯২ সালের ৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
