সমাজসেবক ও শিল্পানুরাগী দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা। আরপি সাহা নামে তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি দেশে প্রথম আবাসিক মহিলা বিদ্যালয় ‘ভারতেশ্বরী হোমস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
আরপি সাহা ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাভারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে রণদা বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে তিনি কঠোর জীবনসংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময়ে রণদা স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং কিছুদিন হাজতবাসও করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জর্জের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ পেয়ে ইংল্যান্ড সফর করেন। পরে সেনাবাহিনী ছেড়ে রেলবিভাগে টিকিট কালেক্টর পদে চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে চার বছরেই তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৪২-১৯৪৩ সালে আরপি সাহা সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা শুরু করেন। এ সময়ে তিনি জর্জ এন্ডারসনের মালিকানাধীন ‘জুট প্রসেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ কিনে নেন। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস কেনেন। একই সঙ্গে তিনি চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি দেশের উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে প্রচুর অর্থ দান করতেন। তিনি কুমুদিনী হাসপাতাল, টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ, মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ ছাড়াও চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক হল, নাট্যমঞ্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯৪৭ সালে রণদা ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ গঠন করেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে বর্তমানে কুমুদিনী হাসপাতাল, নার্সিং বিদ্যালয়, মহিলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ভিলেজ আউটরিচ প্রোগ্রাম, ট্রেড ট্রেনিং বিদ্যালয়, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্র্যাফট, জুট বেলিং ও ওয়্যারহাউস, বেঙ্গল রিভার সার্ভিস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য আরপি সাহা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালে তার স্মরণে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুত্রসহ রণদাপ্রসাদকে অপহরণ করে। পরবর্তী সময় তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কাজী সালমা সুলতানা
