Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:09 am

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বন্ধু, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, উর্দু সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় কবি কাইফি আজমির ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের মিজওঁয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম সাইয়িদ আখতার হুসেইন রিজভি। কাইফি আজমি গজল দিয়ে কাব্যচর্চা শুরু করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি প্রথম গজল রচনা করেন। তিনি উর্দু ও ফার্সি সাহিত্য বিষয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৪২ সালে ভারতছাড় আন্দোলনের সময় তিনি  লেখাপড়া ছেড়ে দেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। পরে মুম্বাই শহরে চলে আসেন। কাইফি আজমি কমিউনিস্ট মুখপত্র উর্দু ‘কওমিজংয়ে’ নিয়মিত লিখতেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান রচনা করেন। অসংখ্য ছবিতে তিনি গান রচনা করেন। কাইফি আজমি চলচ্চিত্রের জন্য সংলাপও রচনা করেন। ‘হির রানঝা’ চলচ্চিত্রের গোটা সংলাপ কবিতার ছন্দে লিখে তিনি ইতিহাস  সৃষ্টি করেন। হিন্দি ছায়াছবির জন্য তার রচিত গানের সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপরে। গান ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন আখির-ই-সাব, শারমায়া, আওয়ারা সাজদে, কৈফিয়াত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। নারী অধিকার, শ্রেণিবিভেদ ও সামাজিক সচেতনতার পক্ষে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। ‘আউরত’, ‘মকান’, ‘বহুরূপনী’, ‘দাইরা’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য রচনা। তার রচিত  আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ম্যায় আউর মেরি শায়েরি’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাইফি আজমি একজন প্রতিথযশা কবি ও সিনেমা ব্যক্তিত্ব। সেসময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্যাতন তাকে ব্যথিত করে তোলে। তিনি তার কবিতা ও গানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ শিরোনামে কবিতা লেখেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ পদক দেয়া হয়। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবনে দেশ-বিদেশের নানা সম্মান তিনি অর্জন করেন। এর মধ্যে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পদক, সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপসহ অসংখ্য পুরস্কার ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০২ সালের ১০ মে মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা