ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা স্বাধীনতা সংগ্রামী বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনিই একমাত্র বিরল প্রতিভার অধিকারী, যিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক ও সমাজ সংস্কারক। তার বাগ্মিতা ছিল অসাধারণ। অনলবর্শী বক্তা হিসেবে তাকে ‘বাগ্মী বিপিন চন্দ্র পাল’ বলে অভিহিত করা হয়। বিপিন চন্দ্র পাল ১৮৫৮ সালের ৭ নভেম্বর হবিগঞ্জের পইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রামচন্দ্র পাল ছিলেন একজন গ্রাম্য জমিদার এবং সিলেট বারের সদস্য। তার মা ছিলেন উদার ও মানবিক গুণের অধিকারী। পারিবারিকভাবেই তার মধ্যে সাম্য ও মানবতা বোধের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। ১৮৬৬ সালে তার বাবা তাকে গ্রামের নয়া সড়ক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তারপর তিনি সিলেটের প্রাইজ স্কুল, কলকাতার হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। রামচন্দ্র পাল কোর্টে কয়েক বছর চাকরি করলেও পরে নিজ জেলা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ চলে আসেন। তারপর সিলেট বারে আইনজীবী হিসেবে যুক্ত হন। একসময় তিনি সিলেটের একজন খ্যাতনামা উকিল হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হন। বিপিন চন্দ্র পাল ১৮৮০ সালে সিলেটের মুফতি স্কুলের ভগ্নাংশ নিয়ে সিলেট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নিজেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৮০ সালে তিনি প্রকাশ করেন সিলেটের প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘পরিদর্শন’। এ ছাড়া তিনি বেঙ্গল পাবলিক অপিনিয়ন, ট্রিবিউন, স্বরাজ, সোনার বাংলা, ইনডিপেনডেন্ট, ডেমোক্রেটসহ অনেক পত্রিকায় সাংবাদিক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বাঙালি নারীশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট অবদান রাখেন। তিনি বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে রোধে তৎকালীন সমাজে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সুনাম অর্জন করেন। তার রচনার মধ্যে প্রবন্ধের সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া তিনি উপন্যাস, জীবনী, আত্মজীবনী ও ইতিহাস রচনা করেছেন। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘দশোভনাদ’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালে। দশোভনাদ নারীসমাজের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লিখিত একটি উপন্যাস। তিনি বাংলায় ১৫টি এবং ইংরেজিতে ১৭টির বেশি বই লিখেছেন। তার রচিত বই বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। ১৯৩২ সালের ২০ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা