লেখক ও সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৮৮৮ সালের ২০ নভেম্বর বর্তমান চাঁদপুরের পাইকারদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের তেমন সুযোগ পাননি। নিজের একান্ত চেষ্টায় পড়াশোনা ও জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি স্বল্প বেতনে স্টিমার কোম্পানির স্টেশনমাস্টারের সহকারী এবং পরে বিমা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে কলকাতায় গিয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এখানে কাজ করে অর্থ সঞ্চয় করেন। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তব করতে কাজ শুরু করেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা মাসিক সওগাত। অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ শাসন ও সমাজের বাধা উপেক্ষা করে নাসিরউদ্দীন তার সম্পাদিত ‘সওগাত’ (১৯২৬) ও ‘বেগম’ পত্রিকার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখে। একই বছর তিনি সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস নামে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। এছাড়া প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক সওগাত, সচিত্র মহিলা সওগাত, শিশু সওগাত। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৪৬ সালে প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকা। বেগম পত্রিকার মধ্য দিয়ে তিনি মুসলিম নারীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটান। বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম সুফিয়া কামাল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। পত্রিকা ও সাহিত্য মজলিসের লেখকদের মধ্যে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন নাহার মাহমুদ, বেগম সুফিয়া কামালসহ অনেকে। সওগাত প্রকাশের (১৯১৮) সংগ্রাম চালাতে চালাতে নারী জাগরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। সেই পত্রিকাটির সামাজিক-জাতীয় ঘোষণা ছিল, ‘নারী না জাগিলে জাতি জাগিবে না।’ নাসিরউদ্দীন সওগাতে মুসলমান নারীদের ছবিসহ তাদের পরিচিতি, জীবনী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনামূলক লেখা প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী অনেক লেখা সে সময় সওগাতের পাতায় প্রকাশ পেত। তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বাংলা একাডেমির ফেলো এবং জাতীয় জাদুঘর ও নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরস্কারসহ নানা পদক ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৪ সালের ২১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা