ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ‘স্বদেশী’ আন্দোলনের নেতা অনিল চন্দ্র রায়ের ১২২তম জন্মদিন আজ। অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলনের সময় ঢাকা অঞ্চলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অনিল রায় ১৯০১ সালের ২৬ মে মানিকগঞ্জের বায়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি নবাবগঞ্জ থানার গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ১৯১৪ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়েই ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করেন। ১৯১৭ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় বিপ্লবী দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। অনিল রায় ১৯২০ সালে নিজ প্রতিভা গুণে ঢাকা দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে নেতা হয়ে ওঠেন। এ সময় বকশীবাজারে নিজ বাড়িতে থেকে তিনি সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যান। তার প্রভাবে বহু তরুণ ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করে। বিপ্লবী নারীনেত্রী লীলা নাগ তার স্ত্রী ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মেয়াদে তিনি জেল খেটেছেন। ১৯৩০ সালে তিনি প্রথম কারাবন্দি হলে তার কাজের দায়িত্ব নেন বিপ্লবী লীলা নাগ। মুক্তিলাভের পর অনিল রায় সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য হন। ১৯৪১ সালে তিনি ও লীলানাগ উভয়ে আটক হন ও কারাভোগ করেন। জেলে থাকাকালীন অনিল চন্দ্র রচনা করেন বিবাহ ও পরিবারের ক্রমবিকাশ, হেগেল প্রসঙ্গে, ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা, সমাজতন্ত্রীর দৃষ্টিতে মার্কসবাদ ইত্যাদি গ্রন্থ। বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জনসেবার জন্য তিনি সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার গঠন করেন। ১৯৪৬ সালের জুন মাসে তিনি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। মহাত্মা গান্ধীর নবাবগঞ্জে আগমন হয়েছিল তারই নেতৃত্বে। ঢাকার নবাবগঞ্জে স্বদেশী আন্দোলনের সভা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। পরবর্তী সময়ে ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হন। ১৯৫২ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা