স্মরণীয়-বরণীয়

সাংবাদিক, রাজনীতিক, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেনের (মানিক মিয়া) ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এক নতুন মোড় নেয়। সে জন্য তিনি বাংলার মানুষের কাছে ‘নির্ভীক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত। মানিক মিয়া ১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিরোজপুর মহকুমা হাকিমের আদালতে সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বরিশালে জেলা জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ লাভ করেন। বরিশালে কর্মরত থাকাকালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আনুকুল্য লাভ করেন এবং চাকরি ছেড়ে কলকাতায় এসে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার পরিচালনা বোর্ডের সেক্রেটারি পদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের শেষের দিকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। অতঃপর ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫১ সালে এ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয়। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) ও তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইয়ুব খানের সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি তিনবার কারাভোগ করেন। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকার আবারও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ও নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে ও গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে সেই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে। তিনি ইত্তেফাকের ‘রাজনৈতিক হালচাল’ ও পরবর্তী সময়ে ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ উপসম্পাদকীয় কলামে ‘মুসাফির’ ছদ্মনামে নিয়মিত রাজনৈতিক নিবন্ধ লেখেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৬১ সালে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী রবীন্দ্র জš§শতবার্ষিকী পালনের বিরোধিতা করলে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন ও কবির জš§শতবার্ষিকী পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৩ সালে আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট হন। সরকারি উদ্যোগে গঠিত পাকিস্তান প্রেস কোর্ট অব অনারের সেক্রেটারি এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালের ২৬ মে মানিক মিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি যান। সেখানে ১ জুন হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০