ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী, নারীশিক্ষা ও নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ লীলা নাগের ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি সাংবাদিক, জনহিতৈষী ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২১ অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লীলাবতী রায় নামেও পরিচিত। তার পিতৃ-পরিবার ছিল তৎকালীন সিলেটের অন্যতম সংস্কৃতিমনা ও শিক্ষিত একটি পরিবার। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে। তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে ‘পদ্মাবতী’ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তার বাবা বদলি হয়ে ঢাকায় এলে তিনি ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেসময়কার পরিবেশে সহশিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তৎকালীন উপাচার্য ড. হার্টস তাকে বিশেষ অনুমতি দেন। লীলা নাগ ১৯২৩ সালে এমএ পরীক্ষা দিন। তিনি লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি একজন সক্রিয় বিপ্লবী ও আন্দোলনকারী হয়ে ওঠেন। লীলা নাগ শিক্ষা-সংক্রান্ত সংস্কারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘ নামে নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ‘দীপালি স্কুল’ ও ১২টি ফ্রি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি নারীশিক্ষা মন্দির, শিক্ষাভবন, আরমানিটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল, শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়সহ ১২টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত বিভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯২৫ সালে তিনি শ্রীসংঘ নামের বিপ্লবী দলের সদস্য হন। লীলা নাগ ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী। ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন এবং বিনা বিচারে কারাবরণ করেন। ১৯৪০ সালের জুলাই মাসে কলকাতার হলওয়েল মনুমেন্টের বাহ্যিক আকৃতি নষ্ট করার দায়ে তিনি ও অনিল রায় দুজনেই অভিযুক্ত হলে তাদের ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখা হয়। কারামুক্তির পর লীলা নাগ নেতাজির দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বাংলা থেকে ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভারতীয় শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নে অবদান রাখেন। তিনি সেসময়ের প্রভাবশালী ‘জয়শ্রী’ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের ১১ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
