প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও সমাজসেবক রোমেনা আফাজের বিশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি তার বিখ্যাত সিরিজ গল্প ‘দস্যু বনহুর’ সিরিজের জন্য ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন। রোমেনা আফাজ ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর বগুড়ার শেরপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার মোহাম্মদী পত্রিকায় তার লেখা ছড়া ‘বাংলার চাষী’ নামক ছড়া প্রথম প্রকাশিত হয়। তার রচিত প্রথম গ্রন্থ ‘রক্তে আঁকা ম্যাপ’। বগুড়ার ‘সাহিত্য কুটির’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা ১৯৫৯ সালে বইটি প্রকাশ করে। বইটি ছিল দস–্য রানি সিরিজের প্রথম বই। রোমেনা আফাজ অসংখ্য ছোটগল্প, কবিতা, কিশোর উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজ ও রহস্য সিরিজ রচনা করেছেন। রোমেনা আফাজের লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে ১৩৮টি দস্যু বনহুর সিরিজ এবং ১২টি দস–্য রানি সিরিজ। এছাড়া তিনি আরও রচনা করেন-সামাজিক ও পারিবারিক, জানি তুমি আসবে, প্রণয়মূলক উপন্যাস, বনহুর: রহস্য সিরিজ, রক্তে আঁকা মাপ: দুঃসাহসিক অভিযান, মান্দিগোর বাড়ি: কিশোর উপন্যাস ও বিদগ্ধা জননী: সামাজিক উপন্যাস উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে তার রচিত ছয়টি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্র গুলো হলো-কাগজের নৌকা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, মধুমিতা, মাটির মানুষ ও দস–্য বনহুর। রোমেনা আফাজ লেখক হওয়ার পাশাপাশি একজন সক্রিয় সমাজসেবিকাও ছিলেন। তিনি ৩৭টি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তার মধ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থা, বগুড়ার সাবেক চেয়ারম্যান; ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, বগুড়ার আজীবন উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক; বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য ও শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন । ২০১০ সালে তিনি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাড়া ঢাকার নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা গুণীজন-১৯৯৯ সংবর্ধনা; নারী বিকাশ সংস্থা, বগুড়া থেকে বেগম রোকেয়া স্বর্ণপদক-২০০০; বাংলাদেশ রাইটার্স ফোরাম, বগুড়া থেকে একুশে পদক (সাহিত্য) ২০০৩ এবং গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার নারী ফোরাম থেকে নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত সম্মাননা পদক, ২০০৬ লাভ করেন। তিনি ২০০৩ সালের ১২ জুন মৃত–্যবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা