Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:08 am

স্মরণীয়-বরণীয়

খ্যাতিমান গায়ক, গজল সম্রাট ও ওস্তাদ মেহেদি হাসান খানের ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি গজল সম্রাট মেহেদী হাসান নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম গায়ক ও সুরস্রষ্টা ছিলেন।

মেহেদি হাসান খান ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই ভারতের রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার লুনা গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  শৈশবে  বাবা ওস্তাদ আজিম খান ও চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খানের কাছে তার সংগীতের হাতেখড়ি। কৈশোরেই তিনি গানের অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন। 

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর মেহেদী হাসান তার পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে অভিবাসিত হন। সেখানে তাকে চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতে হয়। সে সময় একটি সাইকেলের দোকানে তিনি মেকানিকের কাজ করা শুরু করেন। আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত সংগীত চর্চা অব্যাহত রাখেন।

মেহেদী হাসান ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান বেতারে ঠুমরি গায়ক হিসেবে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান। তিনি বিভিন্ন ঘরানার শাস্ত্রীয় সংগীত শুনিয়ে বিচারকদের  মুগ্ধ করেন। একজন প্রথম সারির ঠুমরি হিসেবে তিনি রেডিও পাকিস্তানে গান গাইতে শুরু করেন ও সংগীতবোদ্ধাদের মন জয় করেন। পরে তিনি উর্দু কবিতার প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং গজল গাওয়া শুরু করেন।

মেহেদি হাসান তার দীর্ঘ পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে উর্দু, বাংলা, পাঞ্জাবি ও আফগান ভাষায় ২৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার এসেছেন তিনি। বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে দ্বৈত সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার গাওয়া বাংলা গান ‘হারানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়’, ‘ঢাকো যত না নয়ন দুহাতে’, ‘তুমি যে আমার’ প্রভৃতি বাংলা সংগীতের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। লাহোরভিত্তিক চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়ক ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। সুদীর্ঘকাল সংগীত ভুবনে অবস্থান করে তিনি অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তš§ধ্যে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’, ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’, ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ ও ‘শাহেনশাহ-ই-গজল’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৭৯ সালে ভারত সরকার ‘সায়গল অ্যাওয়ার্ড ইন জলন্ধর’ এবং ১৯৮৩ সালে নেপাল সরকার তাকে ‘গোর্খা দক্ষিণা বাহু’ উপাধি দেয়। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১২ সালের ১৩ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা