উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, কবি ও লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি ১৯২৩ সালে মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক পার্থক্যজনিত সমস্যা সমাধানকল্পে সম্পাদিত বেঙ্গল প্যাক্টের প্রবক্তা। তিনি তার সম্পদ অকাতরে সাহায্যপ্রার্থীদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে বাংলার ইতিহাসে দেশবন্ধু নামে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি সি.আর দাশ নামেও পরিচিত।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের আদি নিবাস মুন্সীগঞ্জের তেলিরবাগ গ্রামে ।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বিশ শতকের প্রথম দিকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সংগঠন ‘অনুশীলন’ সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।
১৮৯৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে তিনি আইনজীবীর পেশা পরিত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের কলকাতা সফর বর্জনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে অনেকবার কারাগারে অন্তরীণ করেন। মহাত্মা গান্ধী যখন অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন, তখন তিনি তার তীব্র সমালোচনা করেন।
চিত্তরঞ্জন দাশ কংগ্রেসের আইন পরিষদ বর্জনের নীতিকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেন। ১৯২২ সালে তিনি কংগ্রেসের অভ্যন্তরে স্বরাজ দলের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় বিধান পরিষদের নির্বাচনে স্বরাজ দল বিজয় অর্জন করে। একই বছর তিনি স্বরাজ দলের মুখপাত্র হিসেবে সাপ্তাহিকী দ্য ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন ও হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদনা করেন। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মের সম্প্রীতি ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল তার মূল রাজনৈতিক দর্শন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বাস্তববাদী এবং প্রচণ্ড বিরোধিতার মাঝেও নিজ অবস্থানে অটল থাকতেন।
রাজনীতির মধ্যে থেকেও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন। সে সময়ের বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি । মালঞ্চ, মালা, সাগর সংগীত ও অন্তর্যামী কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি কবি হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ জাত-বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি নারী মুক্তি সমর্থন করতেন এবং নারীশিক্ষা ও বিধবাদের পুনর্বিবাহকে উৎসাহিত করতেন।
১৯২৫ সালের ১৬ জুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ব্যথিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান’।
কাজী সালমা সুলতানা