দ্রোহ ও প্রেমের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আজ ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। তার রচিত কবিতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণ-আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। রুদ্রর বাবার দেওয়া নাম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। লেখালেখির জগতে এসে নামটি তিনি নিজেই নিজের নাম বদলে হন ‘রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’। তাদের স্থায়ী নিবাস ছিল বাগেরহাট জেলার মংলা থানার সাহেবের মেঠ গ্রামে।
রুদ্রর শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানা বাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বর্তমান বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার অন্তর্গত)। তিনি ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল রুদ্রর। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তার স্কুলের আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেন একটি পাঠাগার; নাম দেন বনফুল লাইব্রেরি। ১৯৭৫-পরবর্তী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য ও ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’সহ পাঁচ শতাধিক কবিতা, একটি কাব্যনাট্য-বিষ বিরিক্ষের বীজ, বড়গল্প মনুষ্য জীবন, অর্ধশতাধিক গান ও বেশকিছু ছোটগল্প। তার রচিত কাব্যগ্রন্থÑউপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, ছোবল, গল্প, দিয়েছিলে সকল আকাশ ও মৌলিক মুখোশ। রুদ্র মুহাম্মদ তার কাব্যযাত্রায় ধারণ করেছেন দ্রোহ প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্যকে। নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের সঙ্গে, হয়ে উঠেছিলেন তাদেরই কণ্ঠস্বর। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে শ্রোতাদের একজন প্রিয় কবি হয়ে ওঠেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি প্রতিবাদী রোমান্টিক কবি হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা