Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:15 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত নাট্যকার, গীতিকার অভিনেতা, গ্রামোফোন কোম্পানির সুরকার তুলসী লাহিড়ীর ৬৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নাটক রচনা ও অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করেন। তুলসী লাহিড়ী ১৮৯৭ সালের ৭ এপ্রিল বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গার জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকে তুলসী লাহিড়ীর মনে রবীন্দ্র সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে এর প্রতিফলন তার নাটক, গান, কবিতা ও উদ্ধৃতিতে দেখা যায়। তুলসী লাহিড়ী বিএ ও বিএল পাস করে প্রথমে রংপুর শহরে এবং পরে কলকাতার আলিপুর কোর্টে ওকালতি করেন। এ সময়ে তার রচিত দুটি গান জমিরুদ্দিন খাঁ রেকর্ড করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। এর ফলে হিজ মাস্টার্স ভয়েস ও মেগাফোন গ্রামোফোন কোম্পানিতে তিনি সংগীত পরিচালকের পদ লাভ করেন। শুরু করেন গান রচনা আর সুর সংযোজন। তুলসী লাহিড়ী পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকা আইন ব্যবসা ত্যাগ করে পুরোপুরি চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনয়ে যোগ দেন। সে সময় বিশ্বযুদ্ধের সর্বগ্রাসী প্রভাব বাংলার নাট্যসাহিত্যকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে ও বাংলা নাট্য আন্দোলনের সম্ভাবনার পথ উš§ুক্ত করে দেয়। তুলসী লাহিড়ী যখন চিত্রজগতে প্রবেশ করেন, তখন ছিল চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ। তিনি ৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রামবাংলার দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তাদের ওপর ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে দুঃখীর ইমান ও ছেঁড়া তার নাটক রচনা করে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অসাড়তা প্রমাণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি নাটক রচনা করেন। তার নাটকের মধ্যে মায়ের দাবি, পথিক, লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার, মণিকাঞ্চন, মায়া-কাজল, চোরাবালি, সর্বহারা ইত্যাদি। উত্তর বাংলার কৃষক সমাজের বাস্তব জীবনচিত্র এসব নাটকের উপজীব্য। গানের জগতে তুলসী লাহিড়ীর ঘনিষ্ঠতা ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তার লেখা বহু গান এখন নজরুলগীতি বলে প্রচলিত আছে। তবে সহস াধিক জনপ্রিয় বাংলা গানের এই গীতকারের কোনো গীতসংকলন নেই। তিনি একটি অর্কেস্ট্রা দলও গঠন করেছিলেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২২ জুন মৃত্যুবরণ করেন। গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) মুক্তমঞ্চের নাম তুলসী লাহিড়ীর নামে রাখা হয়েছে

Ñকাজী সালমা সুলতানা