সাংবাদিক, সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ জহুর হোসেন চৌধুরীর ১০১তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯২২ সালের ২৭ জুন বর্তমান ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাদাত হোসেন চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তার কর্মস্থল ছিল সিরাজগঞ্জ। সেখানেই এক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আইএ ও ১৯৪২ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায় ১৯৪৫ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান, কমরেড ও স্টার অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় কাজ করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং কিছুদিন সরকারি চাকরি করেন। পরে আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন এবং উপাত্ত নামে একটি বাংলা পত্রিকা ও ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন।
১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী সংবাদ কার্যালয় পুড়িয়ে দিলে পত্রিকার প্রকাশনা ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি সংবাদ-এর সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে ইংরেজি সাময়িকীর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে তিনি সংবাদ-এ তার বিখ্যাত কলাম দরবার-ই-জহুর লিখতে শুরু করেন। এই কলামে তিনি জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ে লিখতেন। এসব নিবন্ধেরই বাছাই করা সংকলন দরবার-ই-জহুর নামে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ছাত্রজীবনেই জহুর হোসেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ, এমএন রায়ের র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং পঞ্চাশের দশকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রাদেশিক কমিটির সদস্য ছিলেন। তৎকালীন পাক-চীন মৈত্রী সমিতি ও পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাবেরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর জহুর হোসেন চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। পরের বছর তাকে একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়। দৈনিক সংবাদ তার স্মরণে প্রবর্তন করেছে জহুর হোসেন স্মৃতিপদক।
কাজী সালমা সুলতানা
