মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ ফরহাদের আজ ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। তিনি কমরেড ফরহাদ নামেই সমধিক পরিচিত। তার রাজনৈতিক ছদ্মনাম ছিল কমরেড কবির। মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জমাদারপাড়া গ্রামে জš§গ্রহণ করেন।
তিনি দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬১ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবনে সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
মোহাম্মদ ফরহাদ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ার সময়ই সাহিত্যপাঠ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বামপন্থি আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বায়ান্নর বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরে তেভাগার সংগ্রাম ও বাম আন্দোলনের দিনাজপুরে গোপন পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫৩-৫৪ সালে বোদা-পঞ্চগড় ও এর আশেপাশের এলাকায় তিনিই প্রথম ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (কোষাধ্যক্ষ) নির্বাচিত হন।
মোহাম্মদ ফরহাদ কিছুদিন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনে ও শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে (সম্মেলন) কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। রাজনৈতিক কারণে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন এবং কারাভোগ করেন। ১৯৮৬ তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
ছদ্মনামেই (কমরেড কবির) অনেক রাজনৈতিক প্রবন্ধ লেখেন রচনা মোহাম্মদ ফরহাদ। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান’। ১৯৮৭ সালের ৭ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা