স্মরণীয়-বরণীয়

জ্ঞানতাপস, ভাষাতত্ত্ববিদ, লোকবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ১৩৮তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় বাড়িতেই তিনি পারিবারিক পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি শেখেন এবং স্কুলে সংস্কৃত শেখেন। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃত বিষয়ে তিনি ১৯১০ সালে বিএ এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ  পাস করেন। ১৯১৪ সালে তিনি বিএল  ডিগ্রিও অর্জন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে ১৯০৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি চব্বিশ পরগনার বসিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিনি ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহ-গবেষক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯২৮ সালে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চর্যাপদাবলি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। সে বছরই ধ্বনিতত্ত্বের মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমাও লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ থেকে ’৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নিযুক্ত হন। বাংলা একাডেমির বাংলা পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও দাউদ সাহিত্য পুরস্কার কমিটির স্থায়ী চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ২৪টি ভাষা জানতেন।  নানা পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন ও লেখা সম্পাদনা করেছেন। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে তিনি উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। গবেষণা গ্রন্থের পাশাপাশি তিনি অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেছেন।  ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’, ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘নাইট অব দি অর্ডারস অব আর্ট লেটার্স’ (১৯৬৭) উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০