মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গেরিলা যোদ্ধা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের ৭৭তম জš§দিন আজ। তিনি শহিদ আজাদ নামে পরিচিত। আজাদ ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই ঢাকার ইস্কাটনে ধর্ণাঢ্য পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা, গানপাগল, সিনেমাপ্রিয় ও বইপড়ুয়া। শহিদ আজাদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় আত্মসম্মান রক্ষার্থে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তার মা সাফিয়া বেগম। তিনি কঠিন পরিশ্রম করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখান। আজাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেয়ার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি ২নং সেক্টরের বিখ্যাত আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। যুদ্ধে বেশকিছু সফল অভিযানেও অংশ নেন তিনি। একাত্তরের আগস্টে ঢাকায় পরিচালিত দুর্র্ধর্ষ সব অপারেশনের মুহূর্তে শহিদ আজাদদের মগবাজারের বাড়িটি ছিল ‘সেফ হাউস’। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাসদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে শহিদ শাফি ইমাম রুমী (বীর বিক্রম), শহিদ আজাদ ও শহিদ আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল (বীর বিক্রম), শহিদ আবু বকর (বীর বিক্রম) ও শহিদ আলতাফ মাহমুদকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন অনেক খোঁজ করে শহিদ আজাদের মা রমনা থানায় তার খোঁজ পান। মাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আজাদ। মা জানতে চাইলেন, ‘কেমন আছ?’ আজাদ মাকে বললেন, ‘খুব মারে, ভয় হচ্ছে কখন সব স্বীকার করে ফেলি।’ ছেলের সামনে তিনি ভেঙে পড়েননি, বরং ছেলেকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, ‘শক্ত হয়ে থেকো, বাবা। কোনো কিছু স্বীকার করবে না।’ সেদিন থানা হাজতে মায়ের কাছে আজাদ ভাত খেতে চান। আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়ে বলেন, ‘মা কতদিন ভাত খাই না। আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো।’ মা ভাত নিয়ে যান থানায়। সেখানে গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। শহিদ আজাদ আর কোনোদিনও ফিরে আসেননি। ধরে নেয়া হয় সেদিনই পাকিস্তানি ঘাতকরা আজাদকে অন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে।
কাজী সালমা সুলতানা