বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী লেখক, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদার আজ ১১৯তম জন্মদিন। তিনি ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই চিলির পাররাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা তার ছদ্মনাম হলেও পরে এই নামটি আইনি বৈধতা পায়। নেরুদা শিক্ষাজীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৯২৩ সালে ১৯ বছর বয়সে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘টুইলাইট’ প্রকাশ হয়। বইটি তাকে ব্যাপক প্রশংসা ও পরিচিতি এনে দেয়। পরের বছর প্রকাশ হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েম্স অ্যান্ড এ সং অব ডিসপেয়ার’। পাবলো নেরুদা জীবিতকালেই কবি হিসেবে কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্মে ঘটেছে বিভিন্ন প্রকাশ শৈলী ও ধারার সমাবেশ। রচনা করেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, এমনকি প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহারও। তার রচনা অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। তাকে ‘প্রেম ও রাজনীতির কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কবি পাবলো নেরুদা রাজনীতিক হিসেবেও সমাদৃত হন। চিলির দূত হিসেবে তিনি ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে কাজ করেন। ১৯৪৫ সালে চিলির কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সিনেটর নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক দর্শন তাকে সমাজতান্ত্রিক ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়। ১৯৪৮ সালে চিলির রাষ্ট্রপতি গাব্রিয়েল ভিদেলা নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সে সময় গ্রেপ্তার এড়িয়ে তিনি আর্জেন্টিনায় চলে যান। পলাতক জীবনে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় ৩৫ হাজারটিরও বেশি কবিতা প্রকাশ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি চিলিতে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে নেরুদা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি’ বলে বর্ণনা করেন। ১৯৭৩-এর ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় চিলির সামরিক শাসক পিনোচেট নেরুদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত করার অনুমতি দেননি। তবু সেদিন হাজার হাজার শোকাহত চিলিয়ানের উপস্থিতিতে তার অন্ত্যেষ্টি পরিণত হয় চিলির সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম গণপ্রতিবাদে।
কাজী সালমা সুলতানা