নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। আবদুল্লাহ আল মামুন ১৯৪২ সালের ১৩ জুলাই জামালপুরের আমলাপাড়ায় জš§গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মলামারী গ্রামে। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ পাস করেন। ছাত্রজীবনে তিনি নাট্য রচনা নির্দেশনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি প্রথম নাটক ‘নিয়তির পরিহাস’ রচনা করেন। আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক হিসেবে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে পরিচালক হিসেবে ফিল্ম ও ভিডিও ইউনিট ও মহাপরিচালক (২০০১) হিসেবে শিল্পকলা একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের ইতিহাসে তার বড় অবদান হচ্ছে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ শীর্ষক কাব্য নাট্য নির্দেশনা ও অভিনয়। নাট্য সংগঠন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। অসংখ্য নাটক রচনা করে তিনি নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তার রচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘সেনাপতি’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘কোকিলারা’, ‘দ্যাশের মানুষ’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’, ‘মেহেরজান আরেকবার’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নাটক ছাড়াও নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস ‘সংশপ্তক’ নিয়ে ধারাবাহিক নাটকের পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া অশিক্ষিত, জীবন নিয়ে জুয়া, অঙ্গীকার, মানে না মানাসহ কয়েকটি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যেÑ‘সারেং বৌ’, ‘সখী তুমি কার’, ‘এখনই সময়’, ‘জোয়ারভাটা’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুই বেয়াইয়ের কীর্তি। আবদুল্লাহ আল মামুন ৭টি উপন্যাস রচনা ও প্রকাশ করেন। ‘তিনি আমার আমি’ নামে একটি আত্মচরিত এবং ‘ম্যানহাটান’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনি রচনা করেন। তাছাড়া নাট্যাভিনেতাদের জন্য ‘অভিনয়’ (প্রথম খণ্ড) নামে একটি শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। শিল্প ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা