Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:10 am

স্মরণীয়-বরণীয়

ষাটের দশকের কবি ও সাংবাদিক আবুল হাসানের আজ ৭৬তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। তার প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া ও আর সাহিত্যিক নাম আবুল হাসান। ১৯৬৫ সালে তিনি ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থের প্রয়োজনে পড়া শেষ করতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা বিভাগে যোগদান করেন। আবুল হাসান স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই নিয়মিত কবিতা লেখা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি গভীরভাবে কবিতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি একজন সৃজনশীল কবি হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেফাক’-এ বার্তা বিভাগে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর একে একে ‘গণবাংলা’, ‘জনপদ’ ও ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। এক দশকের কাব্যসাধনায় তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। আত্মত্যাগ, নিঃসঙ্গচেতনা, স্মৃতিমুগ্ধতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার কবিতায় সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে তার লেখা ‘শিকারী লোকটা’ কবিতা এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। সে বছরই প্রকাশিত ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থে তার কবিতা স্থান পায়। আবুল হাসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাজা যায় রাজা আসে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তার কিছুদিন পরে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে তুমি হরণ করো’। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’। কবিতা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং নাটক রচনা করেছেন। আবুল হাসান যৌবনে পদার্পণের আগেই হƒদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে পূর্ব জার্মানিতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে আবারও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র ২৮ বছর বয়সে আবুল হাসান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর ১৯৮৮ সালে ‘ওরা কয়েকজন’ শীর্ষক একটি কাব্যনাটক ও ১৯৯০ সালে তার ৯টি গল্পের সংকলন ‘আবুল হাসান গল্পসংগ্রহ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা