বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পথচলায় তিনি ছিলেন নির্ভীক সহযাত্রী। কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন অব্যাহত এবং ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় রাখায় তিনি ছিলেন অদম্য প্রেরণা। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল রেণু। তিনি গৃহশিক্ষক ও গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। কিন্তু কম বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অব্যাহত থাকেনি। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্না ফজিলাতুন্নেছা সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ছাড়াও সত্তর দশকের ছাত্রনেতাদের কাছে ছিলেন মমতাময়ী মায়ের মতো। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ মুজিবের বাঙালি জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ত্যাগ, অবদান, অনুপ্রেরণা ও সাহসিকতা ছিল উল্লেখযোগ্য। শেখ মুজিবের প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কলকাতায় লেখাপড়া ও রাজনীতি করতেন। রাজনীতির সূচনা থেকেই শেখ মুজিব এদেশের মানুষের মুক্তির কথা বলতে গিয়ে দফায় দফায় কারাবরণ করেছেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত কিন্তু কিছুই বলতো না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা-পয়সা জোগাড় করে রাখত। যাতে আমার কষ্ট না হয়।’ বঙ্গবন্ধু জীবনের ১৪টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। সে সময় মামলা পরিচালনা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি সংসার, সন্তানদের লালন-পালন, শিক্ষাদান করেছেন বেগম মুজিব। বাঙালি মুক্তির সনদ ছয় দফা কর্মসূচি প্রচারে লিফলেট গোপনে বিতরণ করতেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা। সে সময় দলীয় সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখাশোনা, সভা সমাবেশের ব্যবস্থাও করতেন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করার পর লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বেগম মুজিব তীব্র আপত্তি জানান এবং প্যারোলে মুক্তি প্রতিহত করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য নিয়ে তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। শেখ মুজিবের স্ত্রী ও সহযাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল তারও লক্ষ্য। স্বাধীনতার পর শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের তিনি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণা হয়ে পাশে ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও সপরিবারে নিহত হন।
কাজী সালমা সুলতানা