আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের আজ ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে নাগরিক কবিও বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তার দুটি কবিতা- ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ খুবই প্রশংসা লাভ করে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) নামে কলকাতার বিখ্যাত দেশ ও অন্যান্য পত্রিকায় কবিতা লিখতেন।
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার ৪৬ মাহুতটুলীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তার প্রথম কবিতা ‘উনিশ শ’ উনপঞ্চাশ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৭ সালে ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের সহসম্পাদক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি রেডিও পাকিস্তান, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
শামসুর রাহমান ৬৬টি কাব্যগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ, শিশু-কিশোর সাহিত্য, আত্মস্মৃতি, অনুবাদ, কবিতা, গান ছাড়াও তিনটি অনুবাদ নাটকসহ অনেক সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রƒপ করে ১৯৫৮ সালে তিনি লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ নামক কবিতা। ১৯৬৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান এর প্রতিবাদে করেন। ১৯৬৯ সালে ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আসাদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি রচনা করেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতা।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবারসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং রচনা করেন কবিতা ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা, বিধ্বস্ত নীলিমা, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, পুলিশ রিপোর্ট, হরতাল, এ লাশ আমরা রাখব কোথায় ইত্যাদি। শামসুর রাহমান ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী চার বছরে লেখেন শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা। ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি মৌলবাদীরা তাকে হত্যার জন্য তার বাসায় হামলা করে। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য শামসুর রাহমান আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিত ডিলিট উপাধি প্রদান করে। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা