মানবহিতৈষী মহীয়সী মাদার তেরেসার ১১৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। সমাজে যারা অবহেলিত সেসব মানুষকে তিনি তাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। মাদার তিনি ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট আলবেনিয়ার স্কোপেজ শহরে জš§গ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম অ্যাগনিজ, পুরো নাম মেরি টেরিজা বোজাঝিউ। নিজের ছোটবেলা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সন্ন্যাস নিয়ে গরিব-আর্তদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায় যোগদান করেন। ১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিংয়ের একটি মিশনারিতে কাজ শুরু করেন। অ্যাগনিস ১৯৩১ সালের ২৪ মে সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরে ও ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় বহু মানুষ মারা যায়। এ সময় মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট তেরেসার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তিনি সম্পূর্ণভাবে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মাদার টেরেসা ১৯৪৮ সালে সাধারণ পোশাক ছেড়ে নীল পাড় সাদা শাড়িতে নিজেকে বদলে ফেলেন। সেই বছরই তিনি ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৫০ সালে ৭ অক্টোবর কলকাতায় তিনি ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। যার এর শাখা বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে। মাদার তেরেসা আমৃত্যু দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সত্তর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও দুঃখী মানুষের বন্ধু হিসেবে তার খ্যাতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মাদার তেরেসা অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে তিনি বীরাঙ্গনাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। তার সংস্থা বাংলাদেশের অনেক যুদ্ধশিশুকে নিজেদের কাছে নিয়ে যায় এবং তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। তিনি তার সেবাকাজের জন্য ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারত রতœসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস মাদার টেরেসাকে সন্তু হিসেবে ভূষিত করেন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা