জার্মান দার্শনিক, পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হেগেলের ২৫৩তম জন্মেবার্ষিকী আজ। তিনি ১৭৭০ সালে ২৭ আগস্ট দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির স্টুটগার্টে জš§গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল। হেগেল জার্মান ভাববাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। বাস্তবতার ক্ষেত্রে তার ঐতিহাসিক ও ভাববাদী অবস্থান ইউরোপীয় দর্শনকে বিপ্লবী করে এবং মহাদেশীয় দর্শন ও মার্কসবাদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত হয়। নন্দনতত্ত্ব থেকে রাজনীতি সর্বত্র হেগেলের পাণ্ডিত্যের নিদর্শন ছাড়িয়ে আছে। হেগেলের প্রচারিত দর্শনকে বাস্তব ভাববাদ বলা হয়ে থাকে পরবর্তীকালে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের জন্ম হয়েছে হেগেলের দর্শন থেকে। রাষ্ট্রের স্বরূপ ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ইতিহাস ও সভ্যতার বিবর্তনের বিষয়ে অবদান রেখে গেছেন হেগেল। হেগেল শৈশব থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনি স্টুটগার্টের জিমনেশিয়াম ইলাস্ট্রেতে ভর্তি হন। তিনি জ্যাক রুশোর চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল দার্শনিক চিন্তা-চেতনার বিমূর্ত ধারণাগুলো সাধারণের উদ্দেশ্যে সহজ ও সরল করে তোলা। তিনি তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও ১৭৯৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি জানান, শহরের একটি অভিজাত পরিবারে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি অনেকগুলো রচনা প্রকাশ করেন। ১৮০১ সালে তিনি রচনা করেন ‘দ্য ডিফারেন্স বিটুইন ফিস্তে অ্যান্ড শেলিংস সিস্টেম অব ফিলোসফি’। চার বছর জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের প্রভাষক ছিলেন তিনি। ১৮০৫ সালে তিনি দর্শনের অধ্যাপক পদে উত্তীর্ণ হন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘দ্য ফেনোমেনোলজি অব স্পিরিট’, ‘দ্য সায়েন্স অব লজিক’, এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলসফিক্যাল সায়েন্স ইন আউট লাইন ও ফিলোসফি অব হিস্ট্রি উল্লেখযোগ্য। দার্শনিক হেগেল তার দ্বান্দ্বিকতা দিয়ে কর্তাসত্ত্বার সঙ্গে বস্তুময় জগৎ বা অপরের সম্পর্ক সন্ধান করেছেন। হেগেলের মতে, পরমের জ্ঞান পেতে হলে দ্বান্দ্বিকতার আশ্রয় নিতে হবে কারণ জগৎ দ্বন্দ্বময়। বিশ্বের আমূল পরিবর্তনে হেগেলের মতো এত স্পষ্ট ভূমিকা খুব কম দার্শনিকই রাখতে পেরেছে। তার প্রভাব রূপায়িত হয়েছে জার্মান জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে, আর প্রকাশিত হয়েছে তার সবচেয়ে বিখ্যাত দার্শনিক শিষ্য কার্ল মার্কসের মধ্য দিয়ে। ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা