প্রখ্যাত দার্শনিক, চিকিৎসক, লেখক ও উদার নীতিতত্ত্বের প্রবক্তা জন লকের ৩৯১তম জন্মবার্ষিকী আজ। জন লক ১৬৩২ সালের ২৯ আগস্ট ইংল্যান্ডের রিংটোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলে ১৬৪৭ সালে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু। মেধাবী জন লক স্কুলের পরীক্ষাগুলোয় অসাধারণ ফলাফলের পুরস্কারস্বরূপ অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে স্কলারশিপে পড়ালেখার সুযোগ পান। সেখানে মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি প্রয়োজনীয় একাডেমিক কোর্স সম্পন্ন করে চিকিৎসক হন। এছাড়া তিনি দর্শন, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়েও শিক্ষা লাভ করেন। ১৬৬৭ সালে জন লক অক্সফোর্ড থেকে লন্ডন ফিরে আসেন। পেশাগত জীবনে তিনি অধ্যাপনা, চিকিৎসাসহ, কূটনৈতিক ও বাণিজ্য পরিষদের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৬৭১ সালে তিনি মানবিক জ্ঞান এবং রাষ্ট্র ও সমাজ-সম্পর্কিত প্রবন্ধ ‘অ্যান এসে কনসার্নিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ লেখা শুরু করেন। এই প্রবন্ধটি লিখতে তার ২০ বছর সময় লাগে। এরপর তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক লেখা ‘টু ট্রিটিজ অব গভর্নমেন্ট’ রচনা করেন। ‘এপিস্টোলা ডি টোলারেনশিয়া’ নামে আরও একটি প্রবন্ধ রচনা করেন লক। এই প্রবন্ধে ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন মতের প্রতি সরকারের সহনশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। সে সময় ইংল্যান্ডের সামাজিক ও রাজনৈতিক যে শ্রেণিসংগ্রাম সংঘটিত হচ্ছিল, তিনি তাতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। জন লক সমাজে চার্চের রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক চুক্তি মতবাদ প্রচার করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ মুক্ত ও স্বাধীন। তার মতে, ‘শাসিতের ইচ্ছায় চলবে শাসক,’ সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানার নিরাপত্তার প্রয়োজনেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তিনি রাষ্ট্র ও চার্চকে দুই আলাদা সত্তা হিসেবে তুলে ধরেন। এই দার্শনিক ইংল্যান্ডে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পথ পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গৌরবময় বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন। তার মতে, অভিজ্ঞতাপূর্ব বা জš§গত কোনো রূপ জ্ঞানলাভের বা ভাবের অস্তিত্ব নেই। মানুষের মনের সব ভাবেরই মূল হচ্ছে বাস্তব অভিজ্ঞতা। তিনি জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জনকে গুরুত্ব দেন এবং চিন্তা-চেতনার উদারতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। ১৭০৪ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা