গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ২নং সেক্টরের বিখ্যাত আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের নিখোঁজ হওয়ার ৫২ বছর আজ। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় ক্র্যাক প্লাটুনের কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ আজাদ নিজ বাড়িতে পাক-হানাদারদের হাতে ধরা পড়েন। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হয়েছিল নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে। মুক্তিবাহিনীর তথ্য নেয়ার জন্য তার ওপরে চালানো হয় নিষ্ঠুর অত্যাচার। ধারণা করা হয়, সেদিনই ঘাতকরা হত্যা করেছিল আজাদকে। মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ ঢাকার ইস্কাটনে ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শহিদ আজাদ নামে সমধিক পরিচিত। করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে আজাদ দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর আজাদ গেলেন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ওপর অনার্স করতে। ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। একাত্তরের শুরুতে তিনি এমএ পাস করেন। আজাদে সবসময়ই ছিলেন স্বাধীনচেতা সাহসী তরুণ। সেই সঙ্গে দুরন্ত, গানপাগল, সিনেমাপ্রেমী আর বইপড়–ুয়া। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধে যোগ দেন আজাদ। নাম লেখান আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে। বেশ কিছু সফল অভিযানেও অংশ নেন তিনি। ঢাকা শহরে তারা মোট ৮২টি অপারেশন পরিচালনা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে অভিযান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তার মা যখন তার সঙ্গে বন্দি অবস্থায় দেখা করেন, মায়ের কাছে আজাদ ভাত খেতে চান। পরদিন ছেলের জন্য ভাত নিয়ে দেখা করতে গিয়ে আর তাকে খুঁজে পাননি আজাদের মা। এ ছেলে আর কোনো দিনও ফিরে আসেনি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে তারপর দীর্ঘ ১৪ বছর আজাদের মা জীবনে আর কখনও ভাত মুখে দেননি, একমাত্র সন্তানের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪ বছর তিনি বিছানায় ঘুমাননি। কারণ তার একমাত্র সন্তান আজাদ রমনা থানায় আটক থাকাকালে বিছানা পায়নি। এ অমানবিক বাস্তবতা নিয়ে পরে লেখক আনিসুল হক তার বিখ্যাত ‘মা’ উপন্যাস রচনা করেন।
কাজী সালমা সুলতানা