গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ঢাকার ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ গেরিলা দলের সাহসী যোদ্ধা ও ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটক করে। ধারণা করা হয়, ৩১ আগস্ট পাকসেনারা তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। ঢাকার টিকাটুলীর ৬/১ কেএম দাস লেনেও তার বাবার বাড়ি, সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ১৯৭১ সালে জুয়েল পুরান ঢাকার জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্রিকেট খেলায় তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। তিনি আজাদ বয়েজ ও মোহামেডান ক্লাবে ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি ঢাকা, ইস্ট পাকিস্তান ও ইস্ট পাকিস্তান হোয়াইটের হয়েও সাতটি ম্যাচ খেলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শেষ দিকে জুয়েল ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে যান। সেখানে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন দুই নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’-এর একজন গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ঢাকার ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোডের পাওয়ার স্টেশন, যাত্রাবাড়ী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গেরিলা অপারেশনে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গেরিলা অভিযানের সময় বোমা ফেটে ডান হাতে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। সে সময় তিনি থাকতেন ঢাকার বড় মগবাজারে সহযোদ্ধা আজাদের বাড়িতে। পাকবাহিনী সেখানে হানা দিয়ে জুয়েল, আজাদ, কাজী কামাল ও আজাদের দুই ছোট ভাইকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ৩১ আগস্টের পর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে রাতে পাকিস্তানিদের হাতে আরও ধরা পড়েছিলেন রুমি, বদি, আলতাফ মাহমুদসহ অনেকে। ধারণা করা হয়, ওইদিনই পাকসেনারা তাকে হত্যা করে। আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য ১৯৭২ সালে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন।
কাজী সালমা সুলতানা