স্মরণীয়-বরণীয়

সাহিত্যিক, গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি বাংলা সাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক। তার সাহিত্য রচনার সুনিপুণতা, সৃষ্টিশৈলী ও যুক্তিনিষ্ঠতা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। সাহিত্য অঙ্গনে প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’। তিনি ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৯) এবং ইংরেজিতে এমএ (১৮৯০) পাস করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায়ে যোগ দেন। প্রমথ চৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন। লেখার প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে প্রমথ চৌধুরী সরকারি চাকরি ছেড়ে ‘সবুজপত্র’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। বাংলা সাহিত্যে তার নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে কবিতানির্ভরতা ছেড়ে গদ্যধারার সূচনা হয়। ১৯১৪ সালে মাসিক সবুজপত্র প্রকাশনা এবং তার মাধ্যমে বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এই সবুজপত্রকে কেন্দ্র করে তখন একটি শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে এ পত্রিকায় ব্যঙ্গ রসাত্মক প্রবন্ধ ও নানা গল্প প্রকাশ করেন। তার এই ছদ্মনাম থেকে তখন বাংলা সাহিত্যে বীরবলি ধারা প্রবর্তিত হয়। তার সম্পাদিত অন্যান্য পত্রিকা হলো বিশ্বভারতী, রূপ ও রীতি এবং অলকা। প্রমথ চৌধুরী প্রবন্ধ লেখক ও সমালোচক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম বিদ্রুপাত্মক প্রবন্ধ রচনা শুরু করেন। ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে তিনি কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত একবিংশ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। প্রমথ চৌধুরী রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑতেল-নুন-লাকুদ, সনেট পঞ্চাশৎ, চার-ইয়ারি কথা, বীরবলের হালখাতা, পদচারণ, রায়তের কথা, নীললোহিত আত্মকথা প্রভৃতি। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। বাংলা সাহিত্যের এই ব্যক্তিত্ব ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০