সংগীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক অজিত রায়ের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সুরারোপিত একাধিক গান বাংলাদেশের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছে উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা।
ষাটের দশকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করেন তিনি।
দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তারই সুর ও কণ্ঠে ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে জাগছে বাঙালিরা, আজ রুখবে তাদের কারা, আজ রুখবে তাদের কারা’ গানটি প্রচারিত হয়।
অজিত রায় ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন রংপুরের উলিপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি বাংলা ভাষাকে ঘিরে গান রচনা ও পরিবেশনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে গান করেন তিনি।
বাংলা চলচ্চিত্র ‘সুরজ মিয়া’ ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে তিনি একটি করে নতুন গান রচনা করেন। চার দশক কালেরও বেশি সময় ধরে সংগীতের সব ধারায় তার পদচারণা ছিল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি অজিত রায়ই প্রথম সংগীতের মাধ্যমে পরিবেশন করেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে বেতারে সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি কলকাতায় সংগীত পরিবেশন করেন। তারই উদ্যোগে ১৯৯০ সালে ঢাকায় শুদ্ধ সংগীতচর্চার সংগঠন ‘অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন’ যাত্রা শুরু করে। তিনি ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পান। বরেণ্য সংগীতশিল্পী অজিত রায় ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা