Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:57 am

স্মরণীয়-বরণীয়

খ্যাতিমান চিকিৎসক, শিক্ষক, সংগঠক, জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের আজ ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তিন দশকের বেশি সময় তিনি বিনামূল্যে মানসম্পন্ন সেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রণোদনার মাধ্যমে দেশজুড়ে বহুমূত্র রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেন। তিনি ইব্রাহিম বারডেম একাডেমি এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট, আরভিটিসি ও বারটানসহ সারাদেশব্যাপী বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ সরকারের সর্বপ্রথম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নেও তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখেন। মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯১১ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম ‘শেখ আবু মোহাম্মদ ইব্রাহিম’।  তিনি ‘সালার এডওয়ার্ড ইংলিশ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে, এখানেই তিনি চিকিৎসক হিসেবে প্রায় সাত বছর কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর  মোহাম্মদ ইব্রাহিম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন পদে যোগদান করেন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগে তিনি শিক্ষক পদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম যুক্তরাজ্য থেকে এমআরসিপি ও পরের বছর আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ানস থেকে এফসিসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে দেশে ফিরে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজের এডিশনাল ফিজিশিয়ান হিসেবে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি কয়েকজন সমাজকর্মীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৮০ সালে ঢাকার শাহবাগে ‘বারডেম’, নামে একটি বহুমূত্র স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও গবেষণা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবীণ ও বয়স্কদের সেবার ক্ষেত্রেও ডা. ইব্রাহিম নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। তিনি জুরাইনে নিজের পারিবারিক সম্পত্তি সমিতিকে দান করে সেখানে ডায়াবেটিক রোগীদের পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেন। স্বাস্থ্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পদক, ফেলো, বাংলা একাডেমি ফেলো ছাড়াও দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর দিনটিকে জাতীয় ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা