বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮৮তম জন্মদিন আজ। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, ভ্রমণকাহিনীর স্রষ্টা, প্রবন্ধ-রচয়িতা, সাংবাদিক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও কলাম-লেখক। তিনি ‘নীললোহিত’, ‘সনাতন পাঠক’ ও ‘নীল উপাধ্যায়’ প্রভৃতি ছদ্মনামে লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দি, হঠাৎ নীরার জন্য, শ্যামবাজারের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রথম আলো, ‘সেই সময়’, ‘ভানু ও রানু’, ‘মনের মানুষ’ প্রভৃতি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বর্তমান মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন তিনি চাকরি করেন। তারপর তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ১৯৫০ সালে দেশ পত্রিকায় ‘একটি চিঠি ’ নামে সুনীলের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতার পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয় দেশ পত্রিকায়। পরে দেশ পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ এবং ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয়। তিনি চারটি ঐতিহাসিক, দুটি আত্মজীবনীমূলক, ১১৬টি উপন্যাস, চারটি নাটক, ১৭টি কবিতার বই, দুটি গল্পসহ মোট ১৫৬টি বই রচনা করেন। ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য একাডেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর একাডেমির সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রকাশিত তার শিশুতোষ গল্প ‘কাকাবাবু’ সিরিজ পাঠক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত নাটকের মধ্যেÑমালঞ্চমালা, প্রাণের প্রহরী, রাজা-রাণী ও রাজসভায় মাধবী, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার রচিত সাহিত্য থেকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও ‘অরণ্যের দিন-রাত্রি’ নামে দুটি চলচ্চিত্র। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের গল্প নিয়ে তৈরি হয় চারটি সিনেমাÑসবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, এক টুকরো চাঁদ ও মিসর রহস্য। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৮৫ সালে তার ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘সেই সময়’-এর জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
