Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:58 am

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্ভীক বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ১০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে খালি হাতে বাঘ শিকারের জন্য তার নামের সঙ্গে বাঘা যুক্ত হয়। বাঘা যতীন ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর বর্তমান কুষ্টিয়ার জেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঝিনাইদহ জেলায় পৈতৃক বাড়িতে তিনি ছেলেবেলা অতিবাহিত করেন। এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাসের পর যতীন সাঁটলিপি ও টাইপ শেখেন এবং বেঙ্গল গভর্নমেন্টের স্টেনোগ্রাফার পদে নিযুক্ত হন। তিনি একজন আন্তরিক, সৎ, অনুগত ও পরিশ্রমী কর্মচারী হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। একই সঙ্গে তার মধ্যে দৃঢ় আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ জš§ায়। ১৯০৩ সালে তিনি গোপনে বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯০০ সাল থেকে তিনি নিজ জেলায় যুগান্তরের শাখা তৈরি করেন। ১৯০৮ সালে যতীনসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে আলীপুর ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানো হয়। মামলায় অনুশীলন সমিতিকে বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে  প্রমাণের অভাবে যতীন ও নরেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে তারা দুজনে হাওড়া-শিবপুরে আত্মগোপন করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে যতীন আবারও হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন। এবার সঙ্গে তার সহযোদ্ধা যারা গ্রেপ্তার হন তাদের ‘যতীন গ্যাং’ নামে অভিহিত করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে যতীন এ মামলা থেকে মুক্তি পেলেও তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় যতীন ও নরেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারা বাংলা, উত্তর ভারতসহ বিভিন্ন এলাকার বিপ্লবীদের সংগঠিত করেন। এই দলগুলো যতীন মুখোপাধ্যায় ও রাসবিহারি বসুকে নেতা মনোনীত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বিপ্লবীরা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্টস পার্টি গঠনের উদ্দেশ্যে বার্লিনে সমবেত হন এবং জার্মানির সাহায্য কামনা করলে জার্মানির সরকার সম্মত হয়। যতীনকে বিপ্লবী দলগুলোর কমান্ডার ইন চিফ করা হয়। তাকে বালেশ্বরে লুকিয়ে রেখে নরেন বাটাভিয়া যান এবং সেখানে জার্মানির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাহাজে অস্ত্র প্রেরণ ও অর্থনৈতিক সাহায্যের বিষয়ে আলোচনা করেন। এদিকে ব্রিটিশ পুলিশ যতীনের গুপ্ত আশ্রয়ের সন্ধান পেয়ে যায়। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক গুলিবিনিময় কালে বাঘা যতীন মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা