বরেণ্য চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের ৭৩তম জন্মদিন আজ। বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী একাত্তরে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে। তাই তার ক্যানভাসজুড়েও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ। তিনি তার রং ও তুলির টানে রচনা করেন স্বাধীনতার অমরগাথা। শিল্পী শাহাবুদ্দিন বিশাল ক্যানভাসে পেশিবহুল মানুষের গতিশীলতা তুলে ধরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। শাহাবুদ্দিন ১৯৫০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলগী গ্রামে। তিনি ১৯৬৮ সালে ফরিদউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে বিএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন, ১৯৭৪ সালে ফরাসি সরকারের বৃত্তি নিয়ে প্যারিস যান এবং ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসের (ইকোল দে বোজার্ট) চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। এর পর থেকে তিনি প্যারিসেই স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করে করেন। তবে দেশ ও মানুষের টানে বাংলার মাটিতে বারবার ফিরে এসেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তিনি তার চিত্রকলায় সংগ্রামী মানুষের প্রতিকৃতিতে দুর্দমনীয় শক্তি ও অপ্রতিরোধ্য গতির অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলেন। দেশ-বিদেশে নামকরা বহু গ্যালারিতে তার একক ও যৌথভাবে চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়েছে। তার বিভিন্ন চিত্রকর্ম বাংলাদেশ ছাড়াও বুলগেরিয়া, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রখ্যাত গ্যালারি এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে। চারু ও কারুকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ও রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক (১৯৬৮), প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক (১৯৭৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৪), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮২), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৮০) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০০) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ১৯৯২ সালে তিনি মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারি আর্টসের ৫০ জনের একজন হিসেবে বার্সেলোনায় অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকে ভূষিত হন। চিত্রকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা নাইট উপাধি পেয়েছেন।
কাজী সালমা সুলতানা
