কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৯তম জন্মদিন আজ। তিনি গল্প ও উপন্যাস লিখে সুনাম অর্জন করেন। তার অনবদ্য রচনা ‘পথের পাঁচালী’। এ উপন্যাসে তিনি পল্লী জীবন ও মানবজীবনের অন্তর্লীন সত্তা নিপুণভাবে প্রকাশ করেন। পাণ্ডিত্য ও কথকতার জন্য তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাচরাপাড়ায় জš§গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে এন্ট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায়ও ডিস্টিংশনসহ পাস করেন। এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তার এমএ পড়া সম্পন্ন হয়নি। ১৯১৯ সালে তিনি হুগলির একটি মাইনর স্কুলে শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯২১ সালে ‘উপেক্ষিতা’ গল্প প্রকাশের মাধ্যমে বিভূতিভূষণের সাহিত্যিক জীবন শুরু। পরবর্তী ৮ বছর বিরামহীনভাবে তিনি সাহিত্য সাধনা করেন। ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন, যা শেষ করেন ১৯২৮ সালে। এটি বিভূতিভূষণের প্রথম এবং বিখ্যাত রচনা। এ উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি পাঠক পরিচিতি, বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন। অপরাজিত পথের পাঁচালীরই পরবর্তী অংশ। এ দুই গ্রন্থেই তার ব্যক্তিগত জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালীকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন। এছাড়া তার একাধিক গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মোট ৬০টি গ্রন্থ রচনা করেন; তার মধ্যেÑউপন্যাস ১৫টি, ছোটদের উপন্যাস ৭টি, ছোট গল্পগ্রন্থ ১৯টি, অনুবাদগ্রন্থ ৩টি, ভ্রমণ কাহিনী ২টি ও দিনলিপি ৫টি, বারোয়ারি উপন্যাস ৪টি ও বিচিত্র গদ্যরচনা ৫টি। তার রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘আরণ্যক’, পথের পাঁচালী, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী, অশনি সংকেত, দুই বাড়ি, বিপিনের সংসার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার লেখা চাঁদের পাহাড় অবলম্বনে ২০১৩ সালে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্রটিও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চিত্রলেখা (১৯৩০) নামে একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা