স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর, শিল্প-উদ্যোক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতুন কুন্ডুর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ‘সাবাশ বাংলাদেশ’, ‘সার্ক ফোয়ারা’সহ অনেক বিখ্যাত ভাস্কর্যের স্থপতি। নিতুন কুন্ডু আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘অটবি’ স্থাপন করেন ও সফলতা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। নিতুন কুন্ডু ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরের ‘বড়বন্দর’ এলাকায়  জন্মগ্রহণ করেন। দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজা নাথ হাইস্কুলে থেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালে বিখ্যাত অভিনেতা-পরিচালক সুভাষ দত্ত চলচ্চিত্রের কাজে দিনাজপুরে এলে নিতুন কুন্ডর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। সুভাষ দত্ত নিতুন কুন্ডুর সুন্দর হাতের লেখার জন্য সিনেমা হলের ডেকোরেশন, ব্যানার ও সাইন বোর্ড লেখার সহকারী হিসেবে সঙ্গে নেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে চিত্রশিল্পে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক পাস করেন। ১৯৫৯-১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে (ইউসিস) কাজ করেছেন। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন। সে সময়ে তার আঁকা পোস্টারের সেøাগান ছিলÑ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী,  বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান-আমরা সবাই বাঙালি’। চিত্রশিল্পী নিতুন কুন্ডু চারটি একক চিত্রপ্রদর্শনী ছাড়াও দেশে-বিদেশে বহু যৌথ চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রকৌশল ভাবনায়, মেশিনের যন্ত্রাংশ কিংবা নাট-বল্টু তৈরিতে, নতুন মেশিনের পরিকল্পনায় কিংবা লিফট নির্মাণে তার বহুমাত্রিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘অটবি’ নামে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান । বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পী তেলরং, জলরং, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালিকলম মাধ্যমে চিত্র রচনা করেন। তিনি অনেক ভাস্কর্য, ম্যুরাল, জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদকের নকশাকার। তার নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মা ও শিশু, সাবাস বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সাম্পান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। এছাড়া রাজধানীর ‘সার্ক ফোয়ারা’ ও ‘কদম ফোয়ারা’ তারই নির্মিত । চিত্রশিল্পী ও শিল্পপতি হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জাতীয় চিত্রকলায় পুরস্কার, চিত্রকলায় স্বর্ণপদক ‘একুশে পদক’ ইত্যাদি লাভ করেন। ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০