Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:55 am

স্মরণীয়-বরণীয়

লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও লোকসাহিত্য বিশারদ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা এবং ১৯২৬ সালে বিএ পাস করেন। ১৯২৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলার বিভাগ থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন ১৯৩১ সালে স্কুল সাব ইনস্পেক্টর পদে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে সরকারি মাসিক পত্রিকা ‘মাহে নও’ এর সম্পাদক ছিলেন ছয় মাসের জন্য। বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনার পর, ১৯৫৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। 

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন লোকসাহিত্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তিনি মনেপ্রাণে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি, বিশেষত লোকসংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিলেন। তার প্রথম সংগ্রহ ছিল পাবনার মুরারীপুরের প্রেমদাস বৈরাগীর কাছ থেকে সংগৃহীত লালনের একটি গান, যেটা প্রবাসী পত্রিকায় ছাপা হয় ১৩৩০ সালের আশ্বিন সংখ্যায়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি ।

মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের মোট ৪২টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার প্রচেষ্টায় ফোকলোর চর্চা দেশের সুধীমহলের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৫২ সালে লন্ডনে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে যোগ দিয়ে ‘বেঙ্গলি ফোক সং’ নামে প্রবন্ধ পাঠ করে প্রশংসা অর্জন করেন। ওই সম্মেলনে ফোকলোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক লোকসংগীত পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন।

 ত্রয়োদশ খণ্ডে হারামণি তার লোকসংগীতের অমূল্য সংগ্রহ। তিনি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনার মতো তিন খণ্ডে বিভক্ত গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন। তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে শিরনী, ধানের মঞ্জরি, আগরবাতি, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনা, ইরানের কবি প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়া তার লোকবিষয়ক বহু লেখা তৎকালীন প্রবাসী, ভারতী, ভারতবর্ষ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকার মতো বিখ্যাত সব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা