ছান্দসিক এবং রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ প্রবোধচন্দ্র সেনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং সাংস্কৃতিক চেতনার ধারক ছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে ‘ছন্দ’ নিয়ে তিনি প্রচুর গবেষণা করেছেন। ১৯২২ সালে কলেজে তিনি ‘বাংলাছন্দ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লেখেন, যা ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই প্রবন্ধ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবোধচন্দ্র সেনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাকে ‘ছান্দসিক’ বলে অভিহিত করেন। প্রবোধচন্দ্র সেন ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদিনিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের চুন্টা গ্রামে। তিনি গিরিধারী পাঠশালা ও ইউসুফ হাই ইংলিশ স্কুলে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু করেন। প্রবোধচন্দ্র সেন কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ১৯১৫ সালে ম্যাট্রিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯২০ সালে আইএ, সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ এবং প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থাতে তিনি বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। ১৯১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি রাজদ্রোহী সন্দেহে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৮ সালে তিনি কারামুক্তি পান। প্রবোধচন্দ্র সেন খুলনা দৌলতপুর হিন্দু একাডেমিতে (বর্তমানে দৌলতপুর কলেজ) অধ্যাপকের চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪২ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে তিনি বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনে রবীন্দ্র-অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হলে তিনি সেখানে বাংলা বিভাগের প্রধান হন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রফেসর ইমেরিটাস পদে সম্মানিত হন। ছন্দ নিয়ে প্রবোধচন্দ্র সেনের ব্যাপক উৎসাহ কাজ করত। ১৯২২ সালে তার ‘বাংলাছন্দ’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বাংলা ছন্দ বিষয়ক তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথের দান, ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ, ছন্দ পরিক্রমা, ছন্দ-জিজ্ঞাসা, বাংলা ছন্দচিন্তার ক্রমবিকাশ, ছন্দ সোপান, আধুনিক বাংলা ছন্দ-সাহিত্য, বাংলা ছন্দে রূপকার রবীন্দ্রনাথ, নূতন ছন্দ পরিক্রমা প্রধান। তিনি বাংলা ছন্দের তিন রীতির নামকরণ করেন মিশ্রবৃত্ত, কলাবৃত্ত ও দলবৃত্ত। ছন্দ রচনা ছাড়াও সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়েও তিনি গভীর প্রজ্ঞার স্বাক্ষর দিয়েছেন। ১৯৮৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শান্তি নিকেতনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা