বাংলার নবজাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। বাংলা লিপি সংস্কার করে তিনি বাংলা ভাষাকে যুক্তিগ্রাহ্য ও সবার বোধগম্য করে তোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বাঙালি সমাজে প্রগতিশীল সংস্কারের অগ্রদূতও ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮২৮ সালে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে লেখাপড়া করেন ।
১৮৪১ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিত পদে নিযুক্ত হন । এর কিছুদিন পরে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৪৭ সালে তিনি সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান স্থাপন করেন। সে বছরই প্রকাশ পায় তার প্রথম গ্রন্থ ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’। বাংলা ভাষার এ গ্রন্থে প্রথম বিরাম চিহ্নের সফল ব্যবহার করা হয়। শিক্ষাকে আধুনিক করতে বিদ্যাসাগর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে স্থাপনা করেন সর্ব্বশুভকরী সভা। কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি নামমাত্র বেতনের বিনিময়ে শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার বিস্তারে তিনি নিজ উদ্যোগে শতাধিক স্কুল, তš§ন্ধে মেয়েদের জন্য ৪০টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৫ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রকাশ করেন বাংলা শিশুপাঠ্য বর্ণমালা শিক্ষাগ্রন্থ বর্ণপরিচয়। তার রচিত একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃৃত ব্যাকরণ ইত্যাদি বইয়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষা, বানান শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নীতিবোধকে উন্নত করার শিক্ষা দিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করা, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করার জন্যে আন্দোলন করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। ১৮৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও বেথুন সোসাইটিসহ আরও কিছু সংগঠনের সম্মানিত সভ্য ছিলেন। বিদ্যাসাগর ১৮৭৭ সালে ইম্পেরিয়াল অ্যাসেমব্লিজের সম্মাননাÑসনদ লাভ করেন এবং ১৮৮০ সালে সিআইই হন। তিনি ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
