বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩৩ কোরের সদর দপ্তর শিলিগুড়িতে ভারতীয় ও বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের এক সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলন শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মেজর নাজমুল হক ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তিনি মনোযোগী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার বিখ্যাত ঈশ্বর পাঠশালা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬২ সালের ১৪ অক্টোবর প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ৪৩ লাইট অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট রেজিমেন্ট আর্টিলারিতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মেজর নাজমুল হক ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চাকরিকালে তিনি বিভিন্ন আর্টিলারি ইউনিট, সেনাসদর ও গোয়েন্দা বিভাগে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগেই ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ ৭ ইপিআর উইংয়ের অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে তাকে নওগাঁয় পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা অপারেশন সার্চলাইটের খবর নওগাঁয় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে নাজমুল হক স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬ মার্চ নওগাঁ মহকুমা মুক্তাঞ্চল ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় তার মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছাত্র ও যুবকদের তিনি সংগঠিত করে কাছাকাছি কোনো স্কুলের মাঠে চলত প্রশিক্ষণ। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি রাজশাহী-পাবনা অঞ্চলের আঞ্চলিক অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সেক্টরে প্রায় ১৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই সেক্টরের আটটি সাব-সেক্টর ছিল। প্রতিটি সাব-সেক্টরের অপারেশনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকতেন। অনেক সময় তিনি নিজেই অভিযানে নেতৃত্ব দিতেন। সমগ্র রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা, দিনাজপুর ও রংপুরের কিছু এলাকায় অসংখ্য অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেন । সড়ক দুর্ঘটনায় তার আকস্মিক মৃত্যুর পর পরবর্তী সময়ে মেজর কাজী নুরুজ্জামান এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কাজী সালমা সুলতানা