Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:18 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক লায়লা নূর। ১৯৫৭ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। লায়লা নূর ১৯৩৪ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৫৪ সালে বিএ পাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন।

লায়লা নূর ১৯৪৮ সালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালে প্রথম বাংলা ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। পরে ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, সে সময় তিনি আবারও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে শাড়ি পরে খালি পায়ে এসে আমতলায় উপস্থিত হন। সেদিনও ভাষার দাবির সেøাগানে সেøাগানে মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকে সভা-পরবর্তী মিছিল বের হয়। এমন সময় সেই মিছিলের সামনে ট্রাকভর্তি পাকিস্তান সেনাবাহিনী এসে হাজির হয়। সেনারা লায়লা নূরসহ আরও ২০ জন আন্দোলনকারী ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে ও কারাগারে  আটক রাখে। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য লায়লা নূর ২১ দিন কারাভোগ করেন।

১৯৫৭ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগদান করেন। তিনি এ কলেজের প্রথম মহিলা অধ্যাপক। এ কলেজেই ১৯৫৭ সাল থেকে টানা ৩০ বছর তিনি শিক্ষকতা করেন। এই কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে ‘দ্য টিচার’ নামে ইংরেজি ম্যাগাজিন বের করতেন। তাতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বাংলা ভাষায় প্রবন্ধ লিখেছেন। তার বেশিরভাগ লেখা ছাপা হয়েছে তিতাস চৌধুরীর সাহিত্য পত্রিকা ‘অলক্ত’-এ। লায়লা নূর তিতাস চৌধুরীর ১১৫টি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। কুমিল্লার সাহিত্য ও সমাজসেবামূলক সংগঠন বিনয় সাহিত্য সংসদ শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য লায়লা নূরকে ‘বিনয় সম্মাননা পদক-২০১৪’ প্রদান করে। তিনি ২০১৪ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ নারী পদক পান। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ মে মৃত্যুবরণ করেন।