জাপানের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ১২৪তম সম্রাট হিরোহিতো। ২৫ বছর বয়সে জাপানের সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রায় ৬৩ বছর তিনি সম্রাটের আসনে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক জাপানের শাসনামলেও তিনি শাসনকাজ পরিচালনা করেন। তার সাম্রাজ্যকালকে ‘শোওয়া’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মিচিনোমিয়া হিরোহিতো ১৯০১ সালের ২৯ এপ্রিল টোকিওর আওয়ামার রাজপ্রাসাদে জš§গ্রহণ করেন।
তার জন্মের সময় হিরোহিতোর দাদা সম্রাট মেইজি জাপানের সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। প্রথানুসারে, রাজপরিবারের সদস্যরা তাদের বাবা-মায়ের মাধ্যমে প্রতিপালিত হতেন না। হিরোহিতো জীবনের প্রথম কয়েক বছর অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল এবং তারপরে একটি সাম্রাজ্য পরিচারকের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলায় তাকে রাজকুমার মিচি বলে সম্বোধন করা হতো। ১৯১২ সালে সম্রাট মেইজি মারা যাওয়ার পর হিরোহিতোর বাবা ইওশিহিতো সম্রাট হিসেবে রাজসিংহাসন গ্রহণ করেন। হিরোহিতো ১৯১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট ও নৌবাহিনীতে উপ-লেফটেন্যান্ট পদ পান এবং এরপর ১৯১৬ সালে তিনি সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন এবং গ্র্যান্ড কর্ডন অব দ্য অর্ডার অব ক্রাইস্যান্থেমাম হিসেবে সম্মানীত হন। ১৯১৬ সালে হিরোহিতোকে জাপান সাম্রাজ্যের যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
তিনি ছিলেন প্রথম সম্রাট যিনি নিজ দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সম্রাট হিরোহিতোর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট বিতর্কিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা হামলায় যুদ্ধের মোড় পাল্টে গিয়েছিল। পরে সম্রাট হিরোহিতো একটি রেডিওতে জাপানের আত্মসমর্পণ করার কথা ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এই নতুন সংবিধান অনুসারে তিনি খুব কম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতীকী ব্যক্তিতে পরিণত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে প্রাণহারানো মানুষদের জন্য সর্বসমক্ষে শোক প্রকাশ করে গেছেন। এমনকি যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে তিনি সবসময় অনুতাপ বোধ করতেন। জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির ক্ষেত্রে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেন। সম্রাট হিরোহিতো মেরিন বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বেশকিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ৭ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু-পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নতুন নামকরণ করা হয় শোওয়া সম্রাট।
-কাজী সালমা সুলতানা