স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুচিত্রা ভট্টাচার্য। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে দহন, ভাঙনকাল, হেমন্তের পাখি, কাছের মানুষ, অলীক সুখ, আমি রাইকিশোরী প্রভৃতি। লেখনীর আঁচড়ে তিনি মধ্যবিত্ত জীবন আর সম্পর্কের টানাপড়নের নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তোলেন। কথাসাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য ১৯৫০-এর ১০ জানুয়ারি বিহারের ভাগলপুরে জš§গ্রহণ করেন। তার স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে দক্ষিণ কলকাতায়। কলেজে পড়ার মাঝেই চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী থাকাকালে তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন স্থানে চাকরি করার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান  করেন ও পরে উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার হন। ছোটবেলা থেকে তিনি রবীন্দ্রনাথের শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখার একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন। সেসব লেখা তাকে সাহিত্য রচনায় আগ্রহী করে তোলে। সত্তরের দশকের শেষের দিকে সুচিত্রা ভট্টাচার্য ছোটগল্প ও আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে উপন্যাস লিখা শুরু করেন। প্রথমদিকে তিনি আনন্দবাজার, দেশ, বর্তমান প্রভৃতি পত্রিকায় গল্প লিখেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম উপন্যাস ‘আমি রাইকিশোরী’। সুচিত্রা ভট্টাচার্য সমকালীন সামাজিক ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে তার কাহিনিগুলো রচনা করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘মিতিন মাসি’ নামক মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রের স্রষ্টা, এবং এই সিরিজে তিনি অনেকগুলো কিশোর উপন্যাস রচনা করেন। ছোটদের জন্য তার লেখাগুলোও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। লেখক হিসেবে সম্পূর্ণ রূপে সময় দেয়ার জন্য তিনি ২০০৪ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের প্রথম সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘কাঁচের দেওয়াল’। এই উপন্যাসেই বাঙালি পাঠকের মন জয় করে নেন তিনি। মধ্যবিত্তদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন, ক্রমশ পরিবর্তনশীল নীতিবোধ, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে নৈতিক অবক্ষয়, নারীদের দুঃখ-যন্ত্রণা তার লেখার মূল উপজীব্য ছিল। প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে তিনি অসংখ্য ছোটগল্প ছাড়াও ২৪টি উপন্যাস রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে ‘কাছের মানুষ’ বৃহত্তম রচনা। তার ‘দহন’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ১৯৯৭ সালে চিত্র-পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন বাংলা চলচ্চিত্র দহন। পরে তার উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে ‘ইচ্ছে’, ‘অলীক সুখ’, ‘প্রাক্তন’ নামক কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্র। সাহিত্যিক জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। এগুলোর মধ্যে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে কথা পুরস্কার, ২০০০ সালে তারাশঙ্কর পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালের ১২ মে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লিখে গেছেন।

-কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০