ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্যসেন। তিনি সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন দান করেন। তিনি ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। সূর্যসেন যখন স্কুলের শিক্ষার্থী সে সময় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয়। ১৯১৬ সালে মাস্টারদা মুর্শিদাবাদের কলেজে বিএ পড়ার সময় বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হন। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে ফিরে এসে বিপ্লবী যুগান্তর দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ১৯১৮ সালে তিনি ‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার সঙ্গে এবং ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। রাজনীতির কারণে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সূর্য সেন শিক্ষকতার কারণে ‘মাস্টারদা’ উপাধি পান। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তারই নেতৃত্বে। বিপ্লবীরা সেদিন দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারা কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেন। সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। সেদিন থেকে চার দিন চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ছিল। ইংরেজ সরকার সূর্য সেনকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান, তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পর মাস্টারদা আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ধরা পড়েন। সূর্য সেন, তারেকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্য সেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কারাগারে সূর্য সেন এবং তারেকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মমভাবে অত্যাচার করে। তারা হাতুড়ি দিয়ে তার দাঁত ভেঙে দেয় এবং তার হাড়ও ভেঙে দেয়। হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে তার সারা শরীরে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। নিষ্ঠুরভাবে তাদের অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। দিনটি ছিল ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি। ফাঁসির পর তাদের মৃতদেহ স্বজনদের না দিয়ে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
-কাজী সালমা সুলতানা