Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:45 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী বাংলা নাটকের নতুন আলোর দিশারি নাট্যকার সেলিম আল দীন। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর গবেষণা করেছেন। বাংলা নাটকে প্রবর্তন করেছেন বর্ণনাত্মক ধারা। বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা নাট্যকোষেরও প্রণেতা তিনি। তার নাটক ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য। নাট্যকার সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখীল গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকেই তার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উদ্যোগেই খোলা হয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। তিনি ওই বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এর আগেই  তিনি নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। ছোটবেলা থেকেই তার লেখকজীবন শুরু হলেও ১৯৬৮ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে তার প্রথম প্রবন্ধ ‘নিগ্রো সাহিত্য’ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম রেডিও নাটক ‘বিপরীত তমসায়’ ১৯৬৯ সালে এবং প্রথম টেলিভিশন নাটক ‘লিব্রিয়াম’ প্রচারিত হয় ১৯৭০ সালে। ‘বহুবচন’ কর্তৃক প্রযোজিত হয় তার প্রথম মঞ্চনাটক ‘সর্প বিষয়ক গল্প’ ১৯৭২ সালে। এরপর থেকে একের পর এক নতুন নতুন বিষয় ও আঙ্গিকে সৃষ্ট তার নাটক প্রদর্শিত হয় মঞ্চ ও টেলিভিশনে। সেলিম আল দীন তার নাটক রচনায় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের রচনারীতি এবং পরিবেশনা শৈলীর নতুন রূপ নির্মাণ করেন। যার নাম দেন ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’। বাংলা নাটকের বিকাশ-পরিক্রমায় তিনি কথা-নৃত্য-গীতের বহুমাত্রিক ব্যবহার করেন। সেলিম আল দীনের লেখা নাটকের মধ্যে মুনতাসির ফ্যান্টাসি, শকুন্তলা, কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, প্রাচ্য, হাতহদাই, নিমজ্জন, ধাবমান, পুত্র ও বনপাংশুল উল্লেখযোগ্য। জীবনের শেষ ভাগে তিনি রচনা করেন ‘নিমজ্জন’ নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

-কাজী সালমা সুলতানা