শোবিজ ডেস্ক: ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাবো না।’ কথাগুলো আজম খানের একটি বিখ্যাত গানের। গানের এ কথাগুলোর সঙ্গে আমরা সবাই একমতÑআজম খানকে আর খুঁজে পাবো না আমরা। তবে তিনি বেঁচে রইবেন তার গানের মাঝে। ‘জীবনে মরণ কেন আসে’, ‘একদিন তো চলে যাব’ শিরোনামেও গান গেয়েছিলেন আজম খান। শুধু মৃত্যুই নয়, সমাজের নানা দিক উঠে এসেছে তার গানে। দেশি লোকসংগীত, পল্লিগীতি, আধুনিক বা সমাজসচেতন গানের সঙ্গে পপশৈলীর মিশেল রয়েছে তার গানে। এসব গানে আজও বুঁদ হয়ে রয়েছে তরুণ-যুবা। ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশের সংগীত জগতে তিনি পপগুরু নামে খ্যাত। দেশের পপসংগীতে অন্যতম পথপ্রদর্শক তিনিই।
আজম খানের জš§ ঢাকায়, ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান। মা জোবেদা খাতুন। ১৯৫৫ সালে ঢাকেশ্বরী স্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকার টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে স্নাতক।
গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও খ্যাত ছিলেন তিনি। অভিনয়ও করেছেন আজম খান। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নাটকে একজন কালা বাউলের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ নামে একটি চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন। ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১০ সালেও বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন। খেলাধুলার প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত রাজধানীর গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। একাত্তরে যুদ্ধ শুরুর পর ঢাকা থেকে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আগরতলায় চলে যান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতের মেলাঘর শিবিরে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেশে ফিরে কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। সে সময় ঢাকার একাধিক গেরিলা অভিযানে অংশ নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ঊনসত্তরের
গণ-অভ্যুত্থানেও যোগ দিয়েছিলেন আজম খান।
সত্তরের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন তার প্রথম কনসার্ট সম্প্রচার করে। দেশের বাইরেও জনপ্রিয় আজম খান। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে কনসার্ট পরিবেশন করেছেন। একাধিক হিট গানের অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। তার অ্যালবামের কয়েক মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
মুখগহ্বরের ক্যানসারে ভুগছিলেন। ক্যানসারের কারণেই ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন তিনি।