শোবিজ ডেস্ক: মধুবালার আসল নাম মমতাজ জাহান দেহলভী। তবে তিনি মধুবালা নামেই বেশি পরিচিত। তার সমসাময়িক নার্গিস ও মীনা কুমারীর পাশাপাশি তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হতো। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সুন্দরী অভিনেত্রী।
মমতাজ জাহান নাম নিয়ে অভিনয় শুরু করলেও অভিনেত্রী দেবিকা রানী তার নাম দেন মধুবালা। মধুবালা শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিনয় শুরু করেন। মূল চরিত্রে অভিনয় শুরু ১৪ বছর বয়সে কিদার শর্মার ‘নীলকমল’ ছবিতে। এতে মধুবালার নায়ক ছিলেন রাজকাপুর। ১৯৪২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৭ বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘মুঘল-ই-আজম’ (১৯৬০) মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
মধুবালা ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারে এক টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বাবার চাকরি চলে যাওয়ার পর সংসারের অভাবের কারণে মধুবালা অভিনয়ে যোগ দেন। এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। নানা কারণে ভাইবোনদের পাঁচজনই শিশু বয়সে মারা যায়। এরপর তার বাবা (তৎকালীন বোম্বে) মুম্বাই চলে আসেন।
কথিত আছে, মধুবালা যখন খুব ছোট তখন এক দরবেশ তাকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিনি জীবনে অনেক খ্যাতি অর্জন করবেন কিন্তু সুখী হতে পারবেন না ও অকালে মারা যাবেন।
মধুবালা কয়েকবার হৃদয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সে সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের সঙ্গে তার প্রেমকাহিনি বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। পাঁচ বছর প্রেমের পর দিলীপ কুমার দুটি শর্ত দিয়েছিলেন মধুবালাকে প্রথমত নিজের পরিবার
ছাড়তে হবে; দ্বিতীয়ত ছাড়তে হবে অভিনয়ও। বলিউড ছাড়তে রাজি হলেও নিজের
মা-বাবাকে ছাড়তে নারাজ ছিলেন মধুবালা। এর পরই দিলীপ কুমার-মধুবালার সম্পর্ক ভেঙে যায়।
এরপর ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবিতে সে সময়ের বিখ্যাত গায়ক ও কমেডি কিং নামে খ্যাত কিশোর কুমারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৯৬০ সালে তাকে বিয়ে করেন। মধুবালাকে নিয়ে তার বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়, কিশোর কুমারকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমারকেই ভালবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমারকে দেখানোর জন্যই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন।
এছাড়া মধুবালাকে নিয়ে পরিচালক কিদার শর্মা, কমল আমরোহি, প্রেমনাথ ও পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রেমের গুজব ছিল সে সময়।
মধুবালার হৃৎপিণ্ডে জন্ম গত ছিদ্র ছিল। ১৯৫০ সালে শারীরিক এ সমস্যা ধরা পড়ে, যার আধুনিক নাম ভেন্ট্রিকুলার সেফটাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) তখন ভারতে এর চিকিৎসা ছিল না। মধুবালার ক্যারিয়ারের স্বার্থে পরিবারের পক্ষ থেকে অসুখের বিষয়টি তখন গোপন করা হয়। কাজের চাপ আর বদ্ধ স্টুডিওতে দিনের পর দিন কাটাতে কাটাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুটিং সেটে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ১৯৬০ সালে কিশোর কুমারকে বিয়ের পর লন্ডন যান মধুবালা। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বড়জোর এক বছর বাঁচবেন তিনি। কিন্তু পরে আরও নয় বছর অসুখের সঙ্গে লড়াই করে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Add Comment